দূরত্ব
....মাহমুদ সীমান্ত
গ্রামের কুয়াশা ভেঙে তুমি যাচ্ছো নিরন্তর। দিগন্তের কাছাকাছি মাঠ পেরিয়ে গেলেই তোমার গ্রামের বাড়ি তুমি তাই দিগন্তের ভাষা বোঝ, বোঝ মাঠে মাঠে ফসলের উর্বরতা। বেলাভূমির ঘাসেদের মাড়িয়ে গিয়ে শিখেছি তোমার শীতলতা,এখন মাইল মাইল দূরের দিকে... হেঁটে যেতে যেতে তোমার ছবি দেখতে পাই। তুমি চলে যাবে দূরে আর তাকিয়ে দেখবে- তোমার গ্রামের মুখ ছুঁয়ে ওঠা ভোরের সে সূর্য;নদীর বুকে চর জেগে উঠলে,তুমি চলে যাবে দূরদেশে- বাণিজ্যের ধারণায়। (...ভাঙনের প্রতিক্রিয়া...) |
বৃক্ষ
....মাহমুদ সীমান্ত
একদিন বৃক্ষ হয়ে যাবো! ঠাঁয় দাঁড়িয়েই হবে, সর্বময় বিস্তার আমার। ডাল-পালা জুড়ে বসে যাবে অতিথি পাখির ঘর- পাখিদের ঘর হবো, পাতাদের সাথে খেলা হবে বাতাসের;সুদূরের কথার গুঞ্জন আমাকে ঘিরেই অনুস্মৃত হবে,মেঘ চাইলে মেঘ, রোদ চাইলে রোদ। পৃথিবীতে কত কত বৃক্ষমর্ম, বৃক্ষকথা রচিত হয়েছে! এইসব বৃক্ষকথা, সকল প্রাণির মতো মানুষেরা- জেনে গেছে; তাই আঙিনায় পদধ্বনি তার। সকল ক্লান্তির শেষে আমাকেই বলে যাবে পৃথিবীর যত যত কাহিনী ব্যঞ্জনা। একদিন বৃক্ষ হয়ে যাবো... ঠাঁয় দাঁড়িয়েই হবে সর্বময় বিস্তার আমার। |
জলাশয়
....মাহমুদ সীমান্ত
মাছের তারুণ্য বুঝে নাকি কেউ?অনামি টিকিটে দেয় সাঁতার, জলায় কাঁপছি, তীরে একাকী দাঁড়িয়ে হন্তারক! অপরাধি! অগ্নিবিদ্ধ ড্রাগনের বেশে আনাড়ি বাদক হলে বোঝাতাম সকল অনাদি লণ্ডভণ্ড জলের উচ্ছ্বাস... মাছের তারুণ্য বিনা কোথাও ফুটে না! নিজেকে দ্যাখার পর যেমন থাকে না নবীন কবিতা। গীতির আলেখ্য। বিভ্রম, মৌসুমী সময়ের- তুমি ফিরে তাকাও না সেদিক। আসুক বসন্ত আজ না থাক কোকিল ফল-ফুল লাল শিমুলের প্রতিবেশে হরষিত তুমিই কোকিল হয়ে বসে যেয়ো বীরদর্প, গাছেদের ডালে। |
সোজা
....মাহমুদ সীমান্ত
ছেলেটার ফুল বলে কথা বাজারে কিনতে যাই ছেলের পছন্দ নাই। ছেলেটার দুই ভুল বাজার আর ফুল ফুলে রাঙা দারুণ বিভূতি। সন্ধ্যার সবুজ আলো মোমবাতি, ঘাস পথিকের পায়ে পায়ে দিগন্তের নীল। রঙিন দ্বীপপুঞ্জের শতদল ঝর্ণার কলকল আর পর্তুগিজ তামাটের দীর্ঘশ্বাস... কিছুই অজানা নয় পৃথিবীটা বোকা ছেলেটা জেনেছে তার মানে ঘটনাটা সোজা বিকেল রঙিন ফুল আস্তাবলে সব কুড়িয়ে পাওয়া গান। |
অসতর্ক
....মাহমুদ সীমান্ত
নদী ছিলো কিংবা ধরো ছিলো না কখনো অন্ধ চোখ তার, দৃষ্টিকালা- দেখে এক রাশিমালা অসতর্ক আয়নায় ঠুনক্ বলেই ভেঙে যায় মূলভাব। এখন দেখতে পাই- তুই যা পারিস, সহজেই দূরে গিয়ে পারলে দেখিস কেটে আনারস! আছে তার দুর্দান্ত সবুজ। ছোট হোক, ধরবে না ভোগের রশ্মিতে সমুদ্রের খুব নিচে গোপন সিন্দুকে তুই তার কিছুই বুঝবি না। ভয় শুধু, ডাকু এলে নিয়ে নেবে তোর থেকে নদীর বিভ্রম ঢেউ থেকে জেগে থাকা তীরের বেদনা। |
সকাল
....মাহমুদ সীমান্ত
এক পশলা রোদ্দুর এসে ছিনিয়ে নেয় সকাল ফলে ঘুম ঘুম চোখে কোনদিন সকাল দেখা হলো না! প্রতিদিন ভাবি, কাঁচাবাজার থেকে সকাল কিনে আনবো;কিন্তু হায়! প্রতিদিনই সকালগুলো দূরে আরো দূরে চলে যায় তাদের বাড়িতে, যারা প্রতিদিন সকাল মাথায় করে পসরা সাজায়। তাদের ঘরে কেবল ভোর ভোর চোখে মা আর মেয়েটি সকাল মাথায় তোলে কর্তাটিকে গঞ্জের দিকে এগিয়ে দেয়। ওই ঘরে খোঁড়া রোদ, বাজার ফেরত রুটিগুলো গিজগিজ করে। |
ভৌগলিক
....মাহমুদ সীমান্ত
আকাশ ঘুমিয়ে থাকো, আমি থাকি পাহারায়। পাছে চোখ দুটো ঘুমে টলে তাই ঘুমকে পাঠিয়ে দিই প্রিয় আঙিনায় আমাদের ছোট ছোট গ্রাম ফেরি করে ঘুমের বাজার,ঘুমায় নদীর শব, গানের পাখির মুখরিত স্বর;পাশের বাড়ির কিচিরমিচির করা শিশুগুলো মূর্ছা যায়। একাকী আকাশ তোমাকে ঘেষেই শুয়ে থাকে রাত,তারা’রাই সে খবর ভালো জানে। আকাশ ঘুমাও যদি... আমাদের ভৌগলিক সীমারেখাগুলি- যারা শুধু বিভক্তির ইশারা পাঠায়- তারা সব ভেসে যাবে রাতের নিরবতায়। উত্তর আকাশ এখন আমার কণ্ঠে জমে আছে মেঘ,ঝড়ো হাওয়া আর একরাশ গলাডুবা অন্ধকার- ও, তুমি ঘুমিয়ে থাকো, আমি আছি পাহারায়। |
ছায়াবৃক্ষ ছায়ামানুষ
....মাহমুদ সীমান্ত
পৃথিবীর সমান বয়সী যে বৃক্ষটি দাঁড়িয়ে আছে আমার বিপরীতে- তাকে আমার জানা হয় না। এরকম বৃক্ষদিনে প্রকৃতির কথা মনে পড়ে আর শুধু কান্না পায়,কেননা সে বৃক্ষটিকে কোনদিন জানা হলো না আমার। এই যে দীনতা আর অপরাধবোধ প্রভাবিত করে একদিন বৃক্ষ হয়ে যেতে। |