পাখিটার নাম দোয়েল। সুবর্ণ গ্রামের জির্ণন অরণ্যে বৈকালিক তন্দ্রায় সে গান গাইতো মিহি সুরে। পাখিটার সুর সবাইকে আলোড়িত করত। দোয়েল ছিল লজ্জাশিলা এবং দারুণ বিনয়ী। তার মায়াবী বর্ণচ্ছটায় ভেসে উঠতো আধাঁরের নিরালায় কোমন শাখা ভরা অসংখ্য পুষ্পকলি। সে জন্যে প্রকৃতির মেঘ-বৃষ্টি, রোদ-আলোয় রহস্যময়
বৈচিত্র্যবিন্যাসে সে সবকিছুকে একাকার করে বের করে রেখেছিল। আকাশ প্রান্তরে চাঁদ তারার টিপের মতো চরগোয়ালদী গ্রামের বৃত্তে সে একটা হীরক খন্ড। ওইসব মেঘপরীর স্মৃতি সকাল-বিকাল, সন্ধ্যা-রাত, চরগোলদী গ্রামের মানুষের হৃদয় পটে নীল বেদনায় ইথারে ইথারে উড়ে বেড়ায়।
বৈচিত্র্যবিন্যাসে সে সবকিছুকে একাকার করে বের করে রেখেছিল। আকাশ প্রান্তরে চাঁদ তারার টিপের মতো চরগোয়ালদী গ্রামের বৃত্তে সে একটা হীরক খন্ড। ওইসব মেঘপরীর স্মৃতি সকাল-বিকাল, সন্ধ্যা-রাত, চরগোলদী গ্রামের মানুষের হৃদয় পটে নীল বেদনায় ইথারে ইথারে উড়ে বেড়ায়।
পড়ার টেবিলে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা হয়ে সে এসেছিল মৌনতার খিড়কি খুলে। আবার সবার চোখের সামনে সে ফুল ঝরে গেল।
বিকালের আগেই দোয়েল চলে গেছে। সূবর্ণগ্রামের সোনার পাখি ঝরে গেছে দেখে বিুদ্ধ এলাকাবাসী মনিরের আস্তানা অগ্নিসংযোগ করেছে।
দোয়েলের
চলে যাওয়া উড়ন্ত আত্মা কি তখন ঘুরে ঘুরে ঈশাখাঁর সোনার বাংলাকে দেখছে না
কি বিষের তীব্র যন্ত্রণা ছেড়ে বেহেস্তের সৌরভ পেতে উড়ার গতিকে আরো বৃদ্ধি
করেছে।
দোয়েল কলেজ থেকে ফেরে স্বাভাবিক হতে পারেনি। বুকের কলিজা কে যেন ধারাল ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। তাহলে ওই পাষণ্ড কে? কি তার পরিচয়?
সূবর্ণগ্রামের ইট পাথরে লুকিয়ে থাকা মনির এক হিংস্র বনো শুয়োর। শুয়োরের যেমন পরিচয় নেই; মনিরেরও তাই। ও একশত ভাগ খাঁটি হারামির বাচ্চা হারামি।
সারা রাত ভেবেছি আর ভেবেছি। ভাবতে ভাবতে পাষাণ হয়ে গেছি। মনে হল সব কি দুঃস্বপ্ন।
পরেরদিন দুপুর বেলায় একটা দুঃসংবাদ শুনলাম। দোয়েল বিষ পানে আত্মহত্যা করেছে। খবরটা শুনেও তার মৃতদেহ দেখতে যাইনি। কেন যে যাইনি তা নিজেই বলতে পারবনা। তবে এখন নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে।
সূবর্ণগ্রামের সোনার লাবণ্য ঢেলে দিয়েছিল দোয়েল। আশ্চর্য সুষমাময় হয়ে উঠেছিল ও। শুধু কি তাই। মেদাতেও এগিয়েছিল। এস.এস.সিতে খুব ভাল রেজাল্ট করেছিল। ভতি হয়েছিল সোনার গাঁও ডিগ্রী কলেজে। এবার এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেবার কথা ছিল। তিনদিন আগে সে ফরম ফিলাপও করেছিল। দোয়েল গত শনিবার প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল। যাবার পথে শুয়োর মনির দোয়েলকে পথরোধ করে। সে বই-খাতা ছিনিয়ে নেয়। অশ্লীল মন্তব্য করে। শাসায়।
দোয়েল ওই অপমান সইতে না পেরে লোক-লজ্জার ভয়ে দুপুরে বিষপানে আত্মহত্যা করে। কিছুণ আগেও মাইকে ভেসে আসা শোক সংবাদ শুনে আমি পাথর হয়ে গেছি। তারপর ঘুমিয়ে পড়ি।
ডাগর ডাগর চোখ দীর্ঘ তনুশ্রী মিনতির সুরে দোয়েল স্বপ্নে আমাকে বলছে-“তোমরা আমাকে গভীরবনে রেখে পালিয়ে যাচ্ছ। সভ্যতার নামে সমাজ বদলের কথা বলে অসভ্য কাজে সহযোগীতা করছ। আমি একটু আশ্রয়ের জন্য এ বন থেকে ও বনে ঘুরেছি। কিন্তু হিংস্র পশুগুলোর তীব্র আঘাতে আমার নীড়ে যেতে পারিনি। সারাণ কেটে ছিল অরতি ডালপালায়। মাঝে মাঝে হিংস্র পশুগুলোর আক্রমনে আমি ভীত মন্ত্রস্ত হয়ে পড়তাম। অশ্রুজলে ভিজে যেত সারাটা বন। কখনও ওরা আমার পালক ভেঙ্গে ফেলে দিত। তখন আমার কাত যন্ত্রণায় বনের বৃগুলোও কেঁদে ফেলতো। সে সময় দিক-বেদিক হারিয়ে সামান্য আশ্রয়ের জন্য সারাটা বন ঘুরে বেড়াতাম। কেউ একটু আশ্রয় দিত না শান্ত দোয়েল পাখিটাকে। সবাই টুকরে টুকরে খেতে চেয়েছিল এ শান্ত পাখির মাংস। তোমরা পাখী মারা যাবার পর পরিবেশবাদী হয়ে যাও। তখন পরিবেশ রায় প্রতিবাদী হয়ে ওঠ। সভ্যতার নামে পাখি অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য অসভ্য কাজ করে যাচ্ছ। যার ফলে আমার মত অসংখ্য পাখির সুন্দর স্বপ্ন আকাংখাগুলোকে বিসর্জন দিয়ে চলে যেতে হয়েছে না ফেরার জগতে।”
* উৎসর্গ : নারায়নগঞ্জের সোনারগায় লাম্পট্যের শিকার হয়ে সদ্য আত্বাহুতি দেয়া রিমিকে।
লেখক : আবুল কাইয়ুম আহম্মদ, E-mail : kaynih7372@yahoo.com