নীড় হারা দোয়েল

undefined---আবুল কাইয়ুম আহম্মদ : পাখিটাকে মেরে ফেলা হয়েছেকেন ? কারণ পাখিটা অসাধারণ এক বুলি শিখেছিলওই অসাধারণ বুলি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে সূবর্ণগ্রামের ইমারতগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে ভয়ংকর শব্দে কেঁপে উঠে হিংস্র পশুগুলো মারা যেততাই পাখিটাকে বিষপানে বাধ্য করা হয়েছে
পাখিটার নাম দোয়েলসুবর্ণ গ্রামের জির্ণন অরণ্যে বৈকালিক তন্দ্রায় সে গান গাইতো মিহি সুরেপাখিটার সুর সবাইকে আলোড়িত করতদোয়েল ছিল লজ্জাশিলা এবং দারুণ বিনয়ীতার মায়াবী বর্ণচ্ছটায় ভেসে উঠতো আধাঁরের নিরালায় কোমন শাখা ভরা অসংখ্য পুষ্পকলিসে জন্যে প্রকৃতির মেঘ-বৃষ্টি, রোদ-আলোয় রহস্যময়
বৈচিত্র্যবিন্যাসে সে সবকিছুকে একাকার করে বের করে রেখেছিলআকাশ প্রান্তরে চাঁদ তারার টিপের মতো চরগোয়ালদী গ্রামের বৃত্তে সে একটা হীরক খন্ডওইসব মেঘপরীর স্মৃতি সকাল-বিকাল, সন্ধ্যা-রাত, চরগোলদী গ্রামের মানুষের হৃদয় পটে নীল বেদনায় ইথারে ইথারে উড়ে বেড়ায়
পড়ার টেবিলে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা হয়ে সে এসেছিল মৌনতার খিড়কি খুলেআবার সবার চোখের সামনে সে ফুল ঝরে গেল
বিকালের আগেই দোয়েল চলে গেছেসূবর্ণগ্রামের সোনার পাখি ঝরে গেছে দেখে বিুদ্ধ এলাকাবাসী মনিরের আস্তানা অগ্নিসংযোগ করেছে
দোয়েলের চলে যাওয়া উড়ন্ত আত্মা কি তখন ঘুরে ঘুরে ঈশাখাঁর সোনার বাংলাকে দেখছে না কি বিষের তীব্র যন্ত্রণা ছেড়ে বেহেস্তের সৌরভ পেতে উড়ার গতিকে আরো বৃদ্ধি করেছে
দোয়েল কলেজ থেকে ফেরে স্বাভাবিক হতে পারেনিবুকের কলিজা কে যেন ধারাল ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে দিয়েছেতাহলে ওই পাষণ্ড কে? কি তার পরিচয়?
সূবর্ণগ্রামের ইট পাথরে লুকিয়ে থাকা মনির এক হিংস্র বনো শুয়োরশুয়োরের যেমন পরিচয় নেই; মনিরেরও তাইও একশত ভাগ খাঁটি হারামির বাচ্চা হারামি
সারা রাত ভেবেছি আর ভেবেছিভাবতে ভাবতে পাষাণ হয়ে গেছিমনে হল সব কি দুঃস্বপ্ন
পরেরদিন দুপুর বেলায় একটা দুঃসংবাদ শুনলামদোয়েল বিষ পানে আত্মহত্যা করেছেখবরটা শুনেও তার মৃতদেহ দেখতে যাইনিকেন যে যাইনি তা নিজেই বলতে পারবনাতবে এখন নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে
সূবর্ণগ্রামের সোনার লাবণ্য ঢেলে দিয়েছিল দোয়েলআশ্চর্য সুষমাময় হয়ে উঠেছিল ওশুধু কি তাইমেদাতেও এগিয়েছিলএস.এস.সিতে খুব ভাল রেজাল্ট করেছিলভতি হয়েছিল সোনার গাঁও ডিগ্রী কলেজেএবার এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেবার কথা ছিলতিনদিন আগে সে ফরম ফিলাপও করেছিলদোয়েল গত শনিবার প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিলযাবার পথে শুয়োর মনির দোয়েলকে পথরোধ করেসে বই-খাতা ছিনিয়ে নেয়অশ্লীল মন্তব্য করেশাসায়
দোয়েল ওই অপমান সইতে না পেরে লোক-লজ্জার ভয়ে দুপুরে বিষপানে আত্মহত্যা করেকিছুণ আগেও মাইকে ভেসে আসা শোক সংবাদ শুনে আমি পাথর হয়ে গেছিতারপর ঘুমিয়ে পড়ি
ডাগর ডাগর চোখ দীর্ঘ তনুশ্রী মিনতির সুরে দোয়েল স্বপ্নে আমাকে বলছে-তোমরা আমাকে গভীরবনে রেখে পালিয়ে যাচ্ছসভ্যতার নামে সমাজ বদলের কথা বলে অসভ্য কাজে সহযোগীতা করছআমি একটু আশ্রয়ের জন্য এ বন থেকে ও বনে ঘুরেছিকিন্তু হিংস্র পশুগুলোর তীব্র আঘাতে আমার নীড়ে যেতে পারিনিসারাণ কেটে ছিল অরতি ডালপালায়মাঝে মাঝে হিংস্র পশুগুলোর আক্রমনে আমি ভীত মন্ত্রস্ত হয়ে পড়তামঅশ্রুজলে ভিজে যেত সারাটা বনকখনও ওরা আমার পালক ভেঙ্গে ফেলে দিততখন আমার কাত যন্ত্রণায় বনের বৃগুলোও কেঁদে ফেলতোসে সময় দিক-বেদিক হারিয়ে সামান্য আশ্রয়ের জন্য সারাটা বন ঘুরে বেড়াতামকেউ একটু আশ্রয় দিত না শান্ত দোয়েল পাখিটাকেসবাই টুকরে টুকরে খেতে চেয়েছিল এ শান্ত পাখির মাংসতোমরা পাখী মারা যাবার পর পরিবেশবাদী হয়ে যাওতখন পরিবেশ রায় প্রতিবাদী হয়ে ওঠসভ্যতার নামে পাখি অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য অসভ্য কাজ করে যাচ্ছযার ফলে আমার মত অসংখ্য পাখির সুন্দর স্বপ্ন আকাংখাগুলোকে বিসর্জন দিয়ে চলে যেতে হয়েছে না ফেরার জগতে
* সর্গ : নারায়নগঞ্জের সোনারগায় লাম্পট্যের শিকার হয়ে সদ্য আত্বাহুতি দেয়া রিমিকে

লেখক : আবুল কাইয়ুম আহম্মদ, E-mail : kaynih7372@yahoo.com
 
Design by নেত্রকোনার আলো | সম্পাদক - সোহেল রেজা | Email-netrakonaralo@gmail.com