‘বর্ষায় রোদনের গান’ কাব্য গ্রন্থের শিমুল মিলকীর এক গুচ্ছ কবিতা

যুগল
...শিমুল মিলকী

হাওয়ায় নেচে ওঠো পাতার মতো সবুজ
সূর্যের আঙুলে আরণ্য বিলাও
কিট পতঙ্গ যাই হোক পোষে রাখো যতনে

ফলত মেঘ দেখো চিবুকে কেমন ঘন হয়
চোখের নুনায় কিভাবে হারায় চাষি সাগরবিলাপ

যে মুখে অস্ত, ঠিক সেইমুখে ভোর
বৃষ্টিতে হাসে পাতার বাঁশি
তালে নাচে অসম্ভব অজানা সব সবুজ ঢেউ

সত্যি অরণ্য আর মেঘ ভূমির যুগল সন্ন্যাস

মাকড়মণ্ডল
...শিমুল মিলকী

বাসাকে জাল ভেবে শ্নির বলয় ভাব
এমন শিল্পে অনভ্যস্ত মানুষ থাকে হাওহায়

মানুষের জন্য এই রসায়ন হঠা ভূপাতিত হলে
তন্ত্রবলে হয় মনোরম

জাল না বলে বাসা বলো
দিমসুদ্ধ ঝুলে থাকা নিবাসে ভূমির আনন্দ দেখো

এখানেই রাঁধুনি সপ্তাহান্তে তুলে ঝাড়ুর প্রলয়
ঝরে পরে অবিশ্বাস্য জালের শিল্প কারিগর

এরূপ বুননে জড়িয়ে দেখো
পৃথিবী রসায়ন রোদনে কতটা অস্থির হয়
আত্মার শরীর
...শিমুল মিলকী

বোঝার জন্য একদিন শূণ্যের হাসি হাসতে হয় ।

যে পথ শেষ হয় দূর্বাঘাসে
তার তলের শরীর একদিন ছেড়ে দেয় রস
উধাও হয় ক্যাসিনো, মদের সিঁড়ি ।

তোমাদের গলিপথ বোঝে না
কবিতার শরীরে ওড়না কতটা অহেতুক ।

ওখানে শূন্যের আদলে অশরীরী উত্থান
হাসির তোড়ে দারুন ঈশ্বর কাঁপে
পড়ন্ত সূর্যে বিঁধে রাখে ভোর ।


বর্ষায় রোদন
...শিমুল মিলকী

নাব্যতায় স্পষ্টত কোনো ইঙ্গিত নেই মানুষের
বর্ষায় যে কটা ফুল, তারা ঠিক বুঝে বুঝে হাসে ।

মানুষ হঠা হারায় মেঘে মেঘে
ঢেকুর পারে আত্মার বিষাদ ।
প্রেমকে বসিয়ে দেহ আচম্বিত ছুঁড়ে দেয় নাব্যতায়
অতঃপর ফুলের শরীর রাতদিন বৃষ্টি পোহায় ।
করুণায় আত্মা বিদীর্ণ হলে
ঘ্রাণে হিসেবে পূর্ণতায় নদী প্রশস্ত হয় ।

পৃথিবীর কিনারায় থাকে মানুষ
বর্ষায় রোদনে পুষ্ট হয় অতিমাত্রায় ।

স্বভাব
...শিমুল মিলকী

আমরা এভাবে সংখালঘু হতে থাকলাম
আর দুর্গম পথে এগোতে থাকলাম । তবু
আমাদের বুনন নিয়েই আমরা তৃপ্ত থাকলাম

জীবনভর পৃথিবীকে মনে হলো আধা-আধা
আদিপিতার জপ-তপও এর ব্যতিক্রম কিছু নয় ।

এভাবে আজ নাগরিক প্রাণী
শিখে নিতে হয় ধাতব রাশিমালার তন্ত্র ।

তাতেই কি সবে সঙ্খালঘু বলা যায়
ভালোবাসার গুহাবাড়ি, পাথরে অলঙ্খার, বনো অগ্নি ।

আসলে কাঁচা ঘাসের চেয়ে সবুজ সুখ নেই কোথাও ।
অর্গান
...শিমুল মিলকী

নাচের সংগত নির্ধারণে
সুমেশ্বরীর রূপ পাহাড়ে হয় লোপাট ।
জলের সচ্ছতায় আদিবাস খুঁজে মুখ,
কাব্যবাজ হয়ে পালায় পৃথিবী ।

তারপর হঠা ওই উঁচুতে চিনাপাহাড়
সিরামিক শিল্পী লোভ ছড়িয়ে ডাকে ।
ইজারাদার শ্রমিক বানিয়ে সরিয়ে নে পাহাড়
বিমূঢ়তায় পড়ে রয় আদিবাসী, দেবতা ।

ঝড়
...শিমুল মিলকী

মাথায় দারুন ঝড়বৃষ্টি ।

লুমের বাগানে সারাসি আলামত
ফোটায় ফোটায় নামে অলীক দর্শন ।

ঝুঁকি নিয়ে কচুপাতায় জীবন
তিয়াসে হারায় আদি রূপ ।
দর্শনে মাথায় ঝঞ্ঝা, গলা চোখ
এলেবেলে গতি। অসম্ভব সবুজ তাণ্ডব ।

হাঁড়ি
...শিমুল মিলকী

আগুন আদরে উথলিয়ে গড়িয়ে ধরে মাটি
ঘরে থাকে হাওয়ার গীত
ঝালে-ঝুলে হলুদ রূপান্তর ।

পটল ঘামে হয় নুনা জলের লেপন
স্বাদের ইশারায় ভুলে তার মরা শরীর
ক্ষেতে কম্পোসে জাগে কালের সূর্য ।

চাষীবউ ছিপির হাতলে ঘোরায় মাথা
আবারও পোয়াতি বিশ্বের স্বাদ পেলে
ছোট হাঁড়ির আকারে বিষাদ চমকায় ।
আমন্ত্রণ
...শিমুল মিলকী

এসব টিলায় দাঁড়িয়ে দূর পাহাড়ে চোখ ।

বিবরণে সুখী হতে গিয়ে
ফালি হলো সবুজের ভাষা ।
ছড়িগুলোয় নিষেদের সুর জেগে রইলো ভয়
তবু সবাক পাখির সাথে উড়াল দিল চোখ ।
আর এভাবেই শূন্যের অপারে
ঠায় দাঁড়িয়ে অজানা সুন্দর
অধরা আমাদের প্রতিস্থান ।

অথচ সেই শূন্যস্থান গলে গলে
কারা যেন আসে যায় চুপচাপ আদিবাসি ।

কখনও হঠা তিরতির হাঁটুজল
দ্রুত উঠে তাড়া দেয় সবে
জলের শৃঙ্গারে মজে এগিয়ে চলে
সঙ্গমে ভরে ওঠে নদী ।

এ জল আদিবাসী না অতিথি
টিলায় টিলায় অস্থির চোখের গতিফের
পাহাড়ের আমন্ত্রণে কাটাতার বিদ্ধ হয় বারবার ।

সব
...শিমুল মিলকী

কেউ কেউ হাওড় উসবেও মেঘে থাকে
ঘাতক কবিতা বীক্ষণে তুলে চারপাশ রোদনসুর ।

অতঃপর উড়াল শিল্পীরা হারায় পলল পাড়ের আশ্রয়
ঢেউয়ের ভাজে মাছেরা পায় বিষের বিলাস ।

আমাদের অ্যাকুরিয়ামে এই নিয়ে আমারা হাওড় উসব করি
দেখি মেঘে মেঘে উড়ে সুদূর অতিত

বাঘমানুষ
...শিমুল মিলকী

বাঘেরা বন ছেড়ে লোকালয়ে এলে
কদাচি মানুষ পেলে খায়,
মানুষখেকো হয়ে ফের
বনে ফিরে যায় ।

মানুষ বনে গেলে ফেরে না
বাঘসুদ্ধ বন গিলে খায় ।
শনির পাথর
...শিমুল মিলকী

হাতের রেখা একে অন্যকে ভেদ করে উধাও
চোখ সাঁতরে বর্ণিল হরফে খুঁজে ভাঁজের কিনার ।

গ্রহদের আনাগোনায় উদ্ভব পৃথিবীর তন্ত্রমন্ত্র
আর গবেষনায় এইসব থাকে মতান্তর ।

যদি বাতিঘরে ফিরে আসা রেখায় জাগে প্রেম,
পাথর বলে বশ মানানোর নেশায় হারায় পৃথিবী ।


বাহক
...শিমুল মিলকী

কি আলো কি আঁধার, সব লুকচুরির মাঝে
আর একটা দুঃখবোধ সদ্যোজাত ।

খরাঘাতে প্রাচীন সব কষ্টডাল ভুলে
আড়াল হতে মগডালে বাসা বাঁধি ।

সেখানেও অদ্ভুত তোমার গন্ধ হাঁটে ।

আমি কেবল উড়ে উড়ে চলি আর ভাবি
দুঃখ জন্মানো একান্তই তাড়না তোমার
আমি কেবল বাহক বনে থাকি ।

জ্ঞান গরিমা
...শিমুল মিলকী

যে অরণ্যে লুকিয়ে ছিল নগরজ্ঞান
জ্বলে জ্বলে তার দাপতে পুড়ছে সবুজ ।
এখন দিনেই জ্বলে শিয়ালের চোখ
রাতের কাতরতায় মটরবাইক ধাবমান ।

নিকট আত্মীয়ের দেয়াল বিভেদ রতে বটে
সামাজিক জালে পাওয়া হয় আদরহীন সম্পর্ক তোড়ন ।

পাড়ায় পাড়ায় মনিটরিং সেল
সর্ষে দানায় জতিল মানচিত্র প্রোপাগান্ডা ।

অরণযের গলা টিপে টিপে
ফুর্তিতে জমে ওঠে কমিউনিটি সেন্টার
উসকে দেয় নগরজ্ঞান
চমকার ভিজোয়াল দাই ।

প্রকৃতি প্রেমিক
...শিমুল মিলকী

ভূতের চালে বড়ই কীর্তন হলে
দূরন্তরা ঠিকই কুড়ায় ফসল ।
লবণে মরিচবাটায় ভূক তাড়ায়
জিহ্বা জ্বলে ফুতে ওঠে লাল মুখ ।

অতঃপর ফলের পুষ্টি শুদ্ধ হয় ।

আড়াল থাকা এরূপ ফলরাজ্য
ভূতের বাড়িতেই সম্ভব ।
মানুষ তাতে শাসন চড়ালে
উড়ে যায় বনের পেতশক্তি ।

সুতরাং  ভূতেরাই প্রকৃতি প্রেমিক ।

উকুন
...শিমুল মিলকী

চুল থেকে বিদ্যু নিয়ে চোখে রাখি
তারাফুলের মতো জ্বলে ওঠে মুদ্রা গুপ্তধন ।
ঘ্রাণ শুকে ডুব দেই আমার বাগান
বিলি কেটে হই অরণ্য দেহকাম ।
কখনোবা হেঁয়ালির তোড়ে ঝুলে থাকি,
তাতে হঠা চিরুনি গতি পেলে
খোলা ময়দানে পাই অবাক শরীর ।




 
Design by নেত্রকোনার আলো | সম্পাদক - সোহেল রেজা | Email-netrakonaralo@gmail.com