আগুন
....আবদুর রাজ্জাক
কোন পথে ছুটেছেন? নিয়ন্ত্রণ আপনারই কাছে
সামনে আগুন- নিশ্চয়ই নিজেকে পুড়িয়ে খাবেন না শুকিয়ে রাখা শস্য দানা জলে ফুটিয়ে একটু একটু করে টানছেন নিজেরই ভেতরে। এত সবে হুশ থাকে! তবে মাঝে মাঝে কেন আগুনে ঝাপ দেবার ইচ্ছে জাগে। |
মুকুট
....আবদুর রাজ্জাক
অলস দিনের কল্পনায় যে মুকুট উঠেছিলো সন্ধ্যা রাতে আধা চাঁদের ঢিমি আলোয়,দু চোখে মায়া মেখে কি জবাব দিয়েছিলো?
যে ঘর তোমাকে চেনেনি- তাকে আঁকড়ে ধরে
পাখি জীবন খাঁচার বন্ধনে খুঁজে ফেরো।
কতদিন এভাবে মকুটের জঞ্জাল খুঁজে ফিরতে হবে
আর, নালা নর্দমায় শরীর ভিজে যাবে। |
অরণ্যে কাটাও একদিন
....আবদুর রাজ্জাক
শুনেছি আগমন বার্তা, জারুলের ফুলের ভেতর তুলে দেখি স্বপ্নেরা আমাকে টেনে হিঁচড়ে বের করছে এক অশালীন ঘর থেকে আমার চারপাশের মত পূতিগন্ধ নেই- আমাকে শূন্যে তুলে দিতে পারি ভ্রমরের গুঞ্জন শুনে ভুলে যেতে পারি ভুলে গিয়েছিলে।
শত শত বছর আমার দাসত্ব; দাসত্ব কেমন জবুথুবু বাতায়ন।
আমার সম্মুখভাগে সভ্যতাহীনতা- আমার পেছনে ধেয়ে আসছে তা ওদিকে যুগ যুগ ফুল কুড়ানোর আশায় বাসী ফুলের পূঁজা নিয়ে এসেছ মহানবতার- কি করে এসেছ বল? হারানোর বেদনা একটু কি নেই?
দু’চোখ চিক চিক করছে, ঝোলার ভেতর কি গল্প নিয়ে এসেছ
আমরা শুনে শুনে ক্লান্ত বিশেষ- এ’অরণ্যে যে গাছের ছোঁয়ায় তোমার শিশু উঠে দাঁড়িয়েছিলো তুমি তাকে পিষে আরো শুষে নিতে কি আয়োজনে মেতেছিলে অন্যবার তোমারই হল না জল সে পাতায় এর চেয়ে বাইরে তোমাকে মানাবে না বলে ভয় পাও।
কি করি? আমার সুখ যদি আসে অসুখের ছাপে তাকে বলি সুখ কি আশে
মাথার উপর খেলছে জোরে নেংটো হুরে তার ছায়া ফেলে কেমন করে বেরোই আমি, অশুচি আলোক বিভায় থাকি সর্বনাশের পাশে।
চোখের উপর কি লেগেছে ঘোর, তা নিয়ে বাঁচো-বাঁচা বলে একে!
রাতে স্বপ্নে ঘোরের ভেতর গেছি অরণ্য টানে শুনেছি বার বার একই আকুতি তার অরণ্যে কাটাও একদিন উদার জমিনে অরণ্য সভ্যতা মনে রাখো। |
পাঠশালা
....আবদুর রাজ্জাক
শরীরটা নিভে যাচ্ছে আলোহীন পৃথিবীতে এসে আজ সকাল বেলা উঠেই ফর্দ তুলেছি কি কি শুনতে হবে কি কি গুনতে হবে।
এইতো দেয়াল টপকে পরস্ত্রীকে অনেক বাহানা শেখাতে
কতনা উৎপাত ভুলে যেতে হয় সামনে পাহারা, পিছনে কাহারা। এই সব ভেবে ভেবে শরীর শুকিয়ে যায়। তার কি দোষ?
কাঁধে এক বোঝা, মাথার উপরেও তা
কোন এক বিজ্ঞাপন হবে বলে ছেলেকে পড়াও স্কুলে পড়তে গেলেই যন্ত্রণা তার আর মনে অনেক অখাদ্য আহার।
শহরের শেষ মাথায় বাক্স বন্দি করে রাখা সেই যে বোকা বিদ্যালয়
তার সারেগামা এসে লাগে না জীবনে যাপনে, শহুরে বীজ বপনে, কি এক অনীহা।
আজ যদি যাই তো কাল আসবো এমন তো নয়
থাকার ভাল, শোয়ার ভাল, সব কিছু তো হয়েছে এবার ওখানে যত অপমানই থাকুক একটা ঘর করবো আমার ছেলেকে ভোলাবো আমার পরিচয় আমার মেয়েকে আমি হয়ে উঠার গল্পটাও শোনাবো না।
আমার পাঠশালা এভাবে এগুচ্ছে
ভাল হচ্ছে, কি মন্দ হচ্ছে, চেঁচাচ্ছে কেউ তবে কেউ জানে না। |
পাঠ
....আবদুর রাজ্জাক
মুখটা পড়তে সুতোয় গাঁথা অনেক মাদুলি অগোছালো আমরা নিভৃতে আলো বিবিধ বন্দনা- বলে বড় হও খোকা আর তারপরই তুলে দিয়েছিল ঘৃণা আমারই হাতে বাবাকে বলেছিলাম- দেখ একদিন হেঙ্গার থেকে নামিয়ে আনবো অসংখ্য তারা। পড়ে নেবে জেগে থাকা মুখ ঘৃণা থাকবে না। বিজয় উল্লাস শুনছি না- যারা এতকাল আগে রক্তাক্ত করে হাসিতে ডুবে যেত। এভাবে অনেক তারা আমাদের পড়ছে নিবেদিত হয়েছি বড় বিনয়ে জেগে উঠেছি… | |
নাগরিক
....আবদুর রাজ্জাক
অর্ধেক রাত কেটেছে নির্ঘুম বাজারে বিক্রি হয়েছে শরীর, মনের বারান্দা। কাগজের উপর কড় কড়ে লেখার গন্ধ,প্রথম সঙ্গম কল্পনা করে, নদীতে জল এসে গেছে।
মাটি কেমন তাকিয়ে থাকে, বলে এসো;মাটির কাছা কাছি যেতে ভয়
চাষা শব্দের ভীর ঠেলে বুনন হবে না আশঙ্কা?
অর্ধেক রাত কেটে যায় নামের
খুশিতে, কল্পনা তবু বাজারে প্রবাসী দালান তুলে বসে।
নেভাতে জানি না আলো তবু ভালো
উপর-নীচ, অক্ষ-দ্রাঘিমা, রেখার টান- অপলক চেয়ে থাকে। |
ফসল
....আবদুর রাজ্জাক
মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে পাও একমুঠো ফসলও নেই চোখে জল আসে পোকা মাকড়ে খেয়েছে সব অবহেলায় বেড়ে উঠেছে নজর লাগেনি আগে।
জমিন প্রস্তুত হয়েছিল ভাল
সন্তানেরা এর দায়িত্ব নেবার পর ঘুমুলে আর জেগে উঠার কথা একটুও ভাবলে না।
সহধর্ম বলে গেল এ থেকে অনেক হবে।
জেগে উঠবে মাঠের পরে মাঠ।
সে সকল সম্ভাবনা গেল, আর জেগে উঠা হবে না
বলে ষড়যন্ত্রের গন্ধ লাগে প্রতি রাতে আর বিরস স্বপ্ন দেখে চমকে উঠেছ খাটে। |
বাসা বদলের পাখি
....আবদুর রাজ্জাক
উপরের রুমটা বদল হয়েছে, ওপাশের দেবদারুতে বসে থাকা পাখি
আর প্রতিদিন ঘুম ভাঙানো স্বজনেরে বড় মনে পড়বে তোমার ভোরে উঠেই উঁচু থেকে দেখতে অনেক মানুষ- ভাবতে সকালে ধাবমান মানুষের মুখ কতটা পবিত্র, সারল্যে ঠাঁসা।
এবারের ঘরটা দেয়ালের পাশে। ওপাশে কিছুই যায় না দেখা
দর্শনের পরিবর্তন আসবে বুঝি! কিংবা পা উচিয়ে জানালার উপর দিয়ে বাইরের অদেখা অবয়ব আরো দৃশ্যমান হয়ে উঠবে মনে। -আজ রাতে তুমি যেন বাসা বদলের পাখি প্রিয় বিষয়ের মুখ খুরকুটো থেকে একটুও সরছে না। |
প্রতিশোধ
....আবদুর রাজ্জাক
আলো ঝলসানো বিকেল, ময়ূরীকে খুঁজতে বেরিয়ে
ঘামে ভেজা দেহ গাছের বাকল স্পর্শ করে একটা বিষ পিপড়া প্রবল আক্রোশে কামড়ে দিতে চায় হঠাৎ থমকে গাছের গোড়ালির গর্তে দ্রুত ঢুকে পরে সম্ভবত তার প্রণয়িনী তাকে ডাকছে।
আমার ফুলকে আমি কখনও খুঁজে পাব না
পকেটে ছিল মোম তাই দিয়ে পিঁপড়ের গর্তটি চিরতরে বন্ধ করে দিই। প্রবল আক্রোশে ভিতরে ঢুকে যায় মোম গলমান স্রোত; একটি পাতা ঝরে পরে তার উপর ঠিক তখনই পাতাটিকে হাতে নিয়ে আমার প্রচণ্ড কান্না পায়। |