প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি : গিরিবাসী বিপ্লবী কন্যা রনিলা বনোয়ারী



আবুল কাইয়ুম আহম্মদ..
মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে এটাই স্বাভাবিককিন্তু সব সময় তা দেখা যায় নাআবার বিভিন্ন সময়ে এমন মানুষও পৃথিবীতে এসেছিলেন যারা মানুষের রুটি-রুজির সংগ্রামে প্রাণমন ঢেলে দেনভালোবাসা দিয়ে তারা জয় করে নেন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, মহাকালরনিলা বনোয়ারী ছিলেন তেমনি একজন অসাধারণ গিরিবাসী বিপ্লবী নারী
চল্লিশের দশকে টংক আন্দোলনের ঝড়ে গারো পাহাড় ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠেছিল তখন রনিলা বনোয়ারী ৩য় শ্রেণীর ছাত্রীস্কুলের সামনে দিয়ে মিছিল যাচ্ছেতিনি সে মিছিলে যোগ দেন
টংক গণ সংগ্রামের পরে নির্যাতিত হাজংরা বেশি সংখ্যক চলে যায়
ভারতেদেশে যারা থেকে যায় তাদের মধ্যে অধিকাংশ হাজং খুবই দরিদ্র অবস্থায় জীবন যাপন করছিলএতবড় সংগ্রামী একটা সম্প্রদায় নিঃশোষিত হচ্ছে দরিদ্রতার করাল গ্রাসেআর তাকে পুঁজি করে লুটেরা ধনিক সাম্রাজ্যবাদের দেশিয় দালাল গোষ্ঠী আদিবাসীদের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, সম্পদ লুণ্টন করতে চায়এসবের বিরুদ্ধে কিভাবে নিজেদের অধিকার আদায় করা হবে, সে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই ছিল রোনিলী বনোয়ারীর নিত্যদিনের কাজহাজং নারীদের লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে দাবী আদায়ের কৌশল তিনি শিা দিয়েছিলেন
৬৯এর গণঅভ্যূত্থান, ১৯৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেনমুক্তিযুক্তকালীন সময়ে তিনি ভারতের মেঘালয়ের কমলা ক্যাম্পে এবং রোঙড়া ক্যাম্পে শরনার্থীদের মধ্যে কাজ করেছেনতাদেরকে তিনি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেননিত্যদিনের পরিধানের সাদা শুভ্র পোশাকের মতোই ছিল তার হৃদয় ও মনতিনি পার্টির একতা, শিখা, ছাত্র ইউনিয়নের জয়ধনি পত্রিকা সমগ্র গারো পাহাড় এলাকায় বন্টনের ব্যবস্থা করতেননানা বাধ্য প্রতিকূলতাকে পেরিয়ে সাহস, ধৈর্য, নিষ্ঠা এবং সততাকে জয় করে তিনি গারো পাহাড়ের সমগ্র আদিবাসী এবং বাঙালিদের নিকট গ্রহণযোগ্য নেত্রীতে পরিণত হয়েছিলেনতিনি ওই গ্রহণযোগ্যতার উপাদান পেয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েবাবা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত থাকায় বাড়িতে মনি সিংহ, ললিত সরকার, বিপিন গুন, মৃনাল কান্তি বিশ্বাস প্রমুখ নেতৃবৃন্দ নিয়মিত আসতেন, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতেনপারিবারিক পরিবেশের কারণেই পরবর্তী কালে কৃষক আন্দোলন ও নারী আন্দোলনে তিনি নিজেকে সহজে জড়িয়ে ফেলেনদেশ স্বাধীন হবার পর তিনি বালুচড়া স্কুলে শিকতা করেছেনতিনি আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাররনীলা বনোয়ারী রেডক্রিসেন্টের সহায়তায় শিশুদের মধ্যে দুধ বিতরণ ও রিলিফ টিমে কাজ করেছেনভবিষ্য প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি দৈনিক সংবাদের ২১ জানুয়ারী ২০০৬ইং সর্বজয়া পাতায় এক সাাকারে বলেছিলেন আন্দোলন, সংগ্রাম প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ব্যাপী চলবেএকটা ফলাফলের আশা করে লড়াই-সংগ্রাম করার সঙ্গে আমি একমত না এটা একটি প্রক্রিয়া, দীর্ঘদিন ধরে চলবেদীর্ঘদিন তিনি পাঘাতে আক্রান্ত ছিলেনগত ৪ ফেব্রয়ারী সকাল ১১ টায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেনতিনি ১৯৩৭ সালের ৬ ফেব্রয়ারী নেত্রকোনা জেলা কলমাকান্দা উপজেলার বালুচরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেনবাবার নাম বাহাদুর স্নালমায়ের নাম চেংরাই বনোয়ারীপাঁচ বোন, তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়১৯৫৩ সালে মনসুর খাগড়ার সাতে তাঁর বিয়ে হয়রনিলা বনোয়ারীর পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলেমৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নেত্রকোনা জেলা শাখার সদস্য ছিলেনবাংলাদেশে রনিলা বনোয়ারীর মত নেত্রীর খুবই অভাবযতদিন পর্যন্ত এদেশে রনিলা বনোয়ারীর মত ত্যাগী, , দেশপ্রেমিক, আদর্শবাদী নেত্রী রাজনীতিতে আসবে না ততদিন এদেশের শোষিত, বঞ্চিত, লাঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের মুক্তি আসবে না
 
Design by নেত্রকোনার আলো | সম্পাদক - সোহেল রেজা | Email-netrakonaralo@gmail.com