ক্লাসরুমে আনিস আর আমি যখন পাশাপাশি
বসেছি তখন ওর এই কলমটার দিকে অনেক বারই তাকিয়ে থেকেছি । ভিক্ষুকের মতো না তাকিয়ে
কলমটার সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থেকেছি।
দু’একবার ছুয়েঁও দেখেছি। খাতায় দু’একটা বাক্য কিংবা আচর
কেটে পরখ করেছি কলমের নির্ঝর।সেই কলমটাই
আনিস হারিয়ে ফেলেছে । সেই
কলমটাই আমি ক্লাসরুমের বেঞ্চের নিচ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি। পেয়ে আনিসের হাতে তুলে না দিয়ে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছি।
কলমটাই আমি ক্লাসরুমের বেঞ্চের নিচ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি। পেয়ে আনিসের হাতে তুলে না দিয়ে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছি।
তখন থেকেই শুরু হয়েছে যন্ত্রণা। মনে হচ্ছে ক্লাস রুমের দরজা-জানালা সব বন্ধ হয়ে গেছে। আমি শব্দহীন অন্ধকার একটা ঘরে আটকা পড়ে গেছি। আমি আর বেরোতে পারবো না। হঠাৎ করেই ব্যাগটা এতো ভারী হয়ে গেছে যে এই ভারী ব্যাগ কাঁধে নেবার শক্তি আর আমার নেই। আমি জানি আমার চেহারাটা এখন রুটি
সেঁক দেওয়ার তাওয়ার মতো হয়ে গেছে। এই অদ্ভুত ঘামে ভেজা চেহারা দেখে ক্লাস রুমের জড় বেঞ্চি গুলো পর্যন্ত হাসাহাসি করছে। ওদের এই হাসি ঠাট্টার আঘাত
থেকে বাঁচতে আমি দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে
ফেলেছি । কিন্তু কিছুতেই নিজেকে রক্ষা করতে পারছি না। বুকের ভেতরটা কলা পাতার
মতো থেমে
থেমে কাঁপছে।
ঘটনাটা ঘটেছে টিফিন পিরিয়ডে। তারপর পঞ্চম পিরিয়ডে বিজ্ঞান ক্লাস হলো। ৬ষ্ঠ পিরিয়ডে ইতিহাস
ক্লাস । সপ্তম পিডিয়ডে সিদ্দিক স্যার যখন ভূগোল ক্লাসে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকতে দিলেন তখনই
প্রয়োজন হলো কলমের। তখনই আনিস টের পেল তার কলম হারিয়েছে।্ ক্লাসের সবাই ব্যাপারটা
তখনই জানলো। সিদ্দিক স্যারও জানালেন
যে আনিসের কলমটা হারিয়ে গেছে।
কিন্তু আমি স্বীকার করিনি। ব্যাগের ভেতরে কলমটা ঢুকানোর পর থেকেই আমি ভয়ে সংকুচিত হয়ে ছিলাম। সন্ধ্যার গাছের পাতাদের
মতো নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ক্লাস রুমের এক কোণায় বসে ছিলাম। ভয়ংকর ভয় উঁকি দিচ্ছিল আমার মনে।
কারণ সবাই ভাববে মাহাবুব ছেলেটা চোর। স্কুলে কেউ আমার সঙ্গে মিশবে না। টিফিন পিরিয়ডে সবাই দল বেধেঁ লোহার গেট পেরিয়ে রাস্তার ধারে বাদাম খেতে যাবে। চালতার আচার খেতে যাবে। আইসক্রিম খেতে যাবে। আমাকে ডাকবেও না কেউ। যেন আমি তাদের কেউ
না। যেন আমি তাদের বন্ধু ছিলাম না কোন দিন। আমাকে হয়তো লাস্ট বেঞ্চের
এক কোণায়
একা একা বসতে হবে। ক্লাস রুমে ঢুকে স্যারেরা হয়তো হাসি হাসি চোখে সবার চোখের দিকেই তাকাবে। কিন্তু ভুল করেও আমার
চোখের দিকে তাকাবেন না। কিংবা তাকালেও ঘৃণার সে অন্ধকার চোকে অনেক তিরষ্কার থাকবে। বিকাল বেলায় কলোনির মাঠে ক্রিকেট খেলতে
গেলে কেউ আমাকে খেলায় নিবে না । সবাই হয়তো আঙুল তুলে বলবে এই ছেলেটা কলম চোর । আমরা কলম চোরের সাথে খেলি না। মাঠের এক কোণায় আমাকে তখন নীরব ঘাসের সঙ্গি হয়ে বসে থাকতে হবে। মাথার উপর দিয়ে ঘরে ফেরা পাখিরা আমাকে দেখে তিরষ্কারের সুর ছড়াবে। সে সুরে অনেক বিষাদ। সে সুরে অনেক যন্ত্রণা।
আমি তাই স্বীকার করিনি যে কলমটা আমার ব্যাগেই আছে। বেঞ্চের নিচে থেকে
কলমটা আমি কুড়িয়ে পেয়েছি। কুড়িয়ে পেয়েই মুহুর্তের ইচ্ছায় কলমটাকে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছি।
দুই
স্কুল ছুটির পর রাজ্যের উচ্ছ্বাস নিয়ে দল বেঁধে বাড়ি ফিরি আমরা। কিন্তু আজকে দলছুট হয়ে বাড়ি ফিরলাম। নিজের কাছে নিজের এই চেহারাটাকে মনে হচ্ছিল গাব গাছের ছড়ানো অন্ধকার। বারবার মনে হচ্ছে শুধু কলমটা ব্যাগে রাখার পাপে গর্ত হয়ে গেছে আমার চেহারা। হাজার লোকের ভীড় থেকে যে কেউ এ চেহারাকে আলাদা করতে পারবে।
স্কুল ছুটির পর রাজ্যের উচ্ছ্বাস নিয়ে দল বেঁধে বাড়ি ফিরি আমরা। কিন্তু আজকে দলছুট হয়ে বাড়ি ফিরলাম। নিজের কাছে নিজের এই চেহারাটাকে মনে হচ্ছিল গাব গাছের ছড়ানো অন্ধকার। বারবার মনে হচ্ছে শুধু কলমটা ব্যাগে রাখার পাপে গর্ত হয়ে গেছে আমার চেহারা। হাজার লোকের ভীড় থেকে যে কেউ এ চেহারাকে আলাদা করতে পারবে।
বাসায় ফিরতেই কুচকানো এই
চেহারার জন্যই হয়তোবা মা’র কাছে ধরা পড়ে গেলাম। মা
বললেন, কিরে মাহাবুব;
তো কি কিছু হয়েছে। স্কুলে কারো সাথে ঝগড়া করেছিস, নাকি স্যারদের বকা খেয়েছিস। মুখটা কালো ছাতার মতো
কালো করে রেখেছিস কেন ?
স্কুলে কী হয়েছে জানতে অনেক
পীড়াপীড়ি করলেন মা। কিন্তু কিছুই স্বীকার করতে পারলাম না। নদীর সমস্ত ঢেউ যেভাবে
তীরে এসে ধাক্কা খায় মার জিজ্ঞাসা গুলোও আমার বুকের ভেতরে প্রচন্ড ধাক্কা দিতে লাগলো। কিন্তু কিছুই স্বীকার করতে পারলাম না । মাকে বললাম-
– ভাত বেরে দাও। অনেক ক্ষুধা লেগেছে।
পেটের ভেতরে অনেক ক্ষুধা। বাটিতে আমার প্রিয় বোয়াল মাছের তরকারি । কিন্তু ভাত যেন গলা দিয়ে নামতে চায় না। ভাত যেন পেটের ভেতর ঢুকতে চায় না। তবু চেষ্টা করে পানি দিয়ে ঢুক গিলে কয়েক গরাস ভাত খেলাম।
মা অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ মাহাবুব তোর কি শরীর খারাপ। বোয়াল মাছের তরকারি
কি স্বাদ হয়নি।’
স্বাদ হয়েছে মা। পেটে ক্ষুধাও আছে। কিন্তু খেতে পারছি
না । গলা দিয়ে ভাত নামছে না মা। গলা ব্যাথা করছে।
তোর
শরীরে কি জ্বর ? বলে মা কপাল ছুঁলেন। গা ছুঁলেন। বললেন, – শরীরে তো তেমন তাপ নেই। তবে ভেতরে ভেতরে জ্বর থাকতে পারে। সে জন্যই হয়তো গলা ব্যথা করছে।
তুই রুমে গিয়ে শুয়ে থাক। তোর জন্য আমি গরম দুধ নিয়ে আসছি। আজকে মাঠে খেলতে যাবিনা কিন্তু।
তিন
শুয়েই ছিলাম। কিন্তু শুয়ে থাকতে আর কতক্ষণ ভাল লাগে। বিকালে ঠিকই মাঠে গেলাম। আমাদের কলোনির মাঠটা অনেক বড়। প্রতি বছর এ মাঠে ‘টেপ টেনিসের’ ক্রিকেট টুনামেন্ট হয়। জুনিয়র- সিনিয়রেরা মিলেমিশে এ মাঠে রোজ বিকালে ক্রিকেট খেলি আমরা। আজকে আমি খেললাম সিনিয়র
একাদশের বকুল ভাইদের সাথে। বকুল ভাই কলেজে পড়েন আর আমি অষ্টম শ্রেণীতে। ক্রিকেট খেলায় পড়াপড়ি কিংবা বড় ছোট
কোন সমস্যা না। রান করাটাই হচ্ছে বড় কথা। অপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে
একটা সুনাম এর মধ্যেই আমার ব্যাট করে নিয়েছে।
কিন্তু আজকের ম্যাচে এটা আমি কী করলাম। প্রথম বলেই বোল্ড। বাকি সময়টা মাঠের কোনায় বসে দুহাত দু গালে রেখে অন্যদের খেলা দেখতে থাকলাম।
রাতে
পড়ার টেবিলে বসে নিজেই নিজের সাথে কথা বললাম। ব্যাগ থেকে কলমটা বের করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলাম। এতোদিন আনিসের হাতে
যে কলমটাকে খুব সুন্দর মনে হতো সে কলমটাকেই এখন মনে হচ্ছে কামার বাড়ির হাপড়ে পুড়ানো গনগনে লোহা। এ কলম ছুঁলেই আমার হাত পুড়ে
যাবে। এ কলম শুধু আনিসের।
ও ঘর থেকে মার ডাক শুনে বুকটা আবারও কেপে
উঠলো । কাপা কাপা হাতে কলমটাকে আবারো ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললাম। কলমটাকে ব্যাগের ভেতরে
লুকিয়ে মনে হলো কিছুটা হলেও শান্তি পেলাম।
অনেক যত্ন করে হাতে তুলে খাইয়ে দিলেন মা। আমার যখন জ্বর হয়, স্কুলে পরীক্ষা শুরু
হয়, খাবার নিয়ে তখন আমি খুব ঘ্যান ঘ্যান করি। মা তখন হাতে তুলে ঘাইয়ে দেয়।
চার
বিছানায় এ পাশ-ও পাশ করতে করতে মাঝ রাতে কখন যে ঘুমিয়েছি জানি না। জেগে উঠে দেখি রোদে চিকচিক করছে জানালা। জানালার পাশে পেঁপে গাছটার সবুজে নাচানাচি করছে ছোট একটা টুনটুনি পাখি।পাখিদের ডানা ওয়ালা জীবনের মজাটাই আলাদা। পাখিরা পাপহীন ডানা ওয়ালা জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বিছানা ছাড়তে ছাড়তেই মনে হল পাখিদের মত ডানা থাকলে আমি নীল পাহাড়ে উড়ে যেতাম। পাপে বোঝাই আমার ব্যাগটাকে পাহাড়ের খাদে ফেলে দিয়ে একা একা বসে থাকতাম। তার পর সূর্য ডোবার উচ্ছ্বাস নিয়ে ঘরে ফিরতাম। কিন্তু আমিতো পাখি না। আমি মাহাবুব, অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি।গতকাল আনিসের কলমটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছি।
বিছানায় এ পাশ-ও পাশ করতে করতে মাঝ রাতে কখন যে ঘুমিয়েছি জানি না। জেগে উঠে দেখি রোদে চিকচিক করছে জানালা। জানালার পাশে পেঁপে গাছটার সবুজে নাচানাচি করছে ছোট একটা টুনটুনি পাখি।পাখিদের ডানা ওয়ালা জীবনের মজাটাই আলাদা। পাখিরা পাপহীন ডানা ওয়ালা জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বিছানা ছাড়তে ছাড়তেই মনে হল পাখিদের মত ডানা থাকলে আমি নীল পাহাড়ে উড়ে যেতাম। পাপে বোঝাই আমার ব্যাগটাকে পাহাড়ের খাদে ফেলে দিয়ে একা একা বসে থাকতাম। তার পর সূর্য ডোবার উচ্ছ্বাস নিয়ে ঘরে ফিরতাম। কিন্তু আমিতো পাখি না। আমি মাহাবুব, অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি।গতকাল আনিসের কলমটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছি।
এই সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই মনে হলো মাকে এখনই এই কলমের কথাটা বলতে হবে। মনে হলো বুকের ভেতরে
গিঁথে থাকা এই পাপের কথা মাকে না বলা পর্যন্ত আমার মনে শান্তি আসবে না। আমি পেঁপে গাছটার ডালে
নাচা নাচি করা ছোট টুনটুনি পাখিটার মত
হতে চাই। যার সবটাই সুন্দর।
ওহ! আমি কেন আনিসের কলমটা ব্যাগে ঢুকাতে গেলাম। আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করে দাও।
মা
তখন রান্না ঘরে। চামচ দিয়ে বগলানো ভাতের হাড়ি থেকে ভাত নিয়ে দেখছেন ভাত ফুটেছে কিনা। জানালা দিয়ে ঢুকা ভোরের
আলোয় মাকে খুব সুন্দর লাগছে। দ্বিধায়, সঙ্কোচে মায়ের আঁচলের খুব কাছে দাঁড়ালাম। চোখা চোখি হতেই মা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। সব স্বীকার করলাম।
কলমটা হাতে নিয়ে মা বললেন,- ‘এরকম একটা কলম কি তোমার
খুব পছন্দ।’
আমি
জানি না প্রথম কবে আনিসের হাতে এই কলম দেখেছি। তবে প্রথম দেখাতেই কলমটার প্রতি মুগ্ধ হয়েছি। ক্লাসে স্যারেরা কিছু লিখতে দিলে নিজের লেখা বন্ধ করে অনেক বারই আনিসের আঙ্গুলে ধরা আনিসের কলমের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। বিশ্বাস কর মা। কোন দিন চিন্তাও করিনি যে এই কলমটা আমি ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলবো। ভাবতেও পারিনি আমার হাত এরকম
একটা জঘন্য কাজ করবে।
এ’কথা শোনার পর মা অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন। মাকে দুহাতে জড়িয়ে
ধরে আমিও চুপ করে রইলাম। বাইরে পেঁপে গাছের সবুজে রোদ তখন চিক চিক করছে। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর মা আদরে দুহাত দিয়ে আমার মুখটা তুলে ধরে বল্লেন
-তুই তো কোন দিন বলিস নি যে এরকম একটা কলম তোর খুব পছন্দ। বললে তোকে অবশ্যই আমি এর চেয়েও সুন্দর কলম কিনে দিতাম। কিন্তু আনিসের কলমটা, আনিসের হাতে তুলে না দিয়ে নিজের ব্যাগে ভরে নিয়ে এসেছিস। কত বড় অন্যায় তুই করেছিস এটা কি তুই বুঝতে পারছিস।
-তুই তো কোন দিন বলিস নি যে এরকম একটা কলম তোর খুব পছন্দ। বললে তোকে অবশ্যই আমি এর চেয়েও সুন্দর কলম কিনে দিতাম। কিন্তু আনিসের কলমটা, আনিসের হাতে তুলে না দিয়ে নিজের ব্যাগে ভরে নিয়ে এসেছিস। কত বড় অন্যায় তুই করেছিস এটা কি তুই বুঝতে পারছিস।
আমি
খুব বুঝতে পারছি মা। জানলার পাশের এই নিশ্চুপ পেঁপে গাছটাও বুঝতে পারছে আমার মনের অবস্থা। আমি কোথাও মনযোগ দিতে
পারছি না। নিজের চেহারার দিকে তাকাতে পারছি না। কলমটাকে আর কলম মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে একটা বিষাক্ত সাপ আমার ব্যাগে ফণা তুলে বসে আছে। কিন্তু কাউকেই কিছু
বলতে পারছি না আমি। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা একটা ভারী পাথরের জড়বস্তু। আমি বুঝে গেছি মা পাপ করার কষ্ট অনেক।
আমি খুশি,
তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ। আমি চাই গতকালের সত্যি ঘটনাটা তুমি
আনিসকে, তোমার স্যারকে খুলে বলবে। তাহলে তোমার মন থেকে সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। তাহলেই তুমি টুনটুনি পাখিটার মত মন খুলে তাকাতে পারবে, হাসতে পারবে। দেখবে চারপাশের সবাই সুন্দর। আর মনে রাখবে অন্যের জিনিস সব সময়ই অন্যের। সে জিনিসে তুমি লোভ করবে না।
পাঁচ
প্রতিদিনের মতোই আজো এসেম্বলিতে ডান হাত তুলে শপথ নিলাম আমরা। দেশকে, দেশের মানুষকে ভালবাসবো। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবো। সৎভাবে জীবন যাপন করবো। সত্য কথা বলবো।
প্রতিদিনের মতোই আজো এসেম্বলিতে ডান হাত তুলে শপথ নিলাম আমরা। দেশকে, দেশের মানুষকে ভালবাসবো। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবো। সৎভাবে জীবন যাপন করবো। সত্য কথা বলবো।
এসেম্বলির পর আমি সরাসরি সিদ্দিক
স্যারের কাছে গেলাম। গতকালের সব ঘটনা খুলে বললাম। বললাম যে, টিফিন পিরিয়ডের সময় বেঞ্চের নিচ থেকে কলমটা আমি কুড়িয়ে পেয়ে ব্যাগে ভরে ফেলেছিলাম। তারপর এতো মানুষের সামনে লজ্জায় কিছু বলতে পারিনি।
সব
শুনে সিদ্দিক স্যার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে
আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আনিসকে ডেকে তার কলমটি ফেরত দিয়ে বললেন যে, ‘ মাহাবুব তোমার কলমটা কুড়িয়ে পেয়েছে ।
ও কে ধন্যবাদ দাও।’
আনিসও খুশির একটা হাসি দিয়ে হ্যান্ডশেক করলো। নিজেকে তখন মনে হচ্ছিল খাঁচা থেকে মুক্তি পাওয়া উড়ন্ত পাখি।
স্যারকে সালাম দিয়ে চলে আসার
সময় স্যার আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় আঙুল বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘ আমি অনেক দোয়া করি মাহাবুব তুমি অনেক বড় মানুষ হও। আমার
বিশ্বাস তুমি অবশ্যই অনেক বড় মানুষ হবা।’
ছয়
স্কুল ছুটির পর অন্যরকম উল্লাস নিয়ে বাড়ি ফিরছি আজ । আসন্ন বিকেলের এই রোদ শালিখ পাখির ডানার মত কোমল। নিজেকে আজ প্রজাপতির মতো হালকা মনে হচ্ছে। যেন আনন্দে এ গাছ থেকে সে গাছে ছুটাছুটি করছি আমি। গত কালের থেকে আজকের দিনটা অনেক সুন্দর। অনেক সুন্দর আমার মুখ। এতো আনন্দের মধ্যেও গানের সুরের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে সিদ্দিক স্যারের কথা গুলো, ‘ আমার বিশ্বাস তুমি অবশ্যই অনেক বড় মানুষ হবে।’
স্কুল ছুটির পর অন্যরকম উল্লাস নিয়ে বাড়ি ফিরছি আজ । আসন্ন বিকেলের এই রোদ শালিখ পাখির ডানার মত কোমল। নিজেকে আজ প্রজাপতির মতো হালকা মনে হচ্ছে। যেন আনন্দে এ গাছ থেকে সে গাছে ছুটাছুটি করছি আমি। গত কালের থেকে আজকের দিনটা অনেক সুন্দর। অনেক সুন্দর আমার মুখ। এতো আনন্দের মধ্যেও গানের সুরের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে সিদ্দিক স্যারের কথা গুলো, ‘ আমার বিশ্বাস তুমি অবশ্যই অনেক বড় মানুষ হবে।’
বাড়ি
ফিরেই মাকে জড়িয়ে ধরলাম। অজকের সব ঘটনা খুলে বললাম । মা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হাসি মুখে বললেন- “ মাহাবুব ঘরে য্ াতোর টেবিলে তোর জন্য একটা পুরস্কার রাখা আছে। ”
রুমে ঢুকেই দেখি টেবিলের উপর গিফ্ট পেপারে মোড়ানো একটা কলমের প্যাকেট। প্যাকটটা খুলতেই দেখি সোনালী নিভের সেই পাইলট কলম। তবে এই কলমটা অন্য
কারো না। শুধুই আমার। পাঁচ আঙুলে ধরা আমার
স্বপ্নের
পাইলট কলম।